শুক্রবার, ৫ মে, ২০১৭

রাঙা শৈশব



ছোটকালে রোজ মুন্নির ছবি বইয়েই লুকিয়ে রাখতাম
টানা টানা চোখ সোনামুখ তার খাতা ভরে ভরে আঁকতাম
ইশারায় ওকে ডাকতাম
কুঁচ বরণীর নিপুন বদনে অপলক চেয়ে থাকতাম
ওর পরশের ধুলোবালি নিয়ে সারা দেহে গায়ে মাখতাম।

খেলা খেলা ছলে পাঠশালা পথ পাশাপাশি শুধু চলতাম
মনের বাসনা আকুলতা আর ব্যাকুলতা মিশে বলতাম
কত যে কথার ফুলঝুরি ফুল মোম হয়ে হয়ে গলতাম
কখনো কখনো ছুতো নাতা নিয়ে জিদে রাগে ক্ষোভে জ্বলতাম
ব্যথা অভিমান ভুলে পরক্ষণে সরি বলে কান মলতাম।

পাঠশালা যেই ছুটি হতো ফের এক সাথে ফিরে আসতাম
কোনো কোনো দিন ভুলেভালে কিছু কটু কথা বলে ফাঁসতাম
মাফ চেয়ে ফের হাসতাম
সুখের সাগরে ভাসতাম
জানি না তখন মনে মনে ওকে ভালো কি খানিক বাসতাম।

গাছের ছায়ায় আম কুড়োনোর কালে বসে ছড়া কাটতাম
ক্ষেপানো বুদ্ধি আটতাম
পাকা আম খুটে দেখিয়ে দেখিয়ে জিভ নেড়ে নেড়ে চাটতাম
ঝড় হলে আম কুড়িয়ে কুড়িয়ে দুজনের মাঝে বাটতাম
তার পরে সাঁঝ গড়াতো যখন ধীরে ধীরে বাড়ি হাঁটতাম।

শেফালির মতো বকুলের মতো ভোরে আলমোটে ঝরতাম
পুজোর আড়ঙে বেলুন ফুলিয়ে বাহানা মজাও করতাম
ঝলমলে হাসি খুশি যত সব মনের কুঠিরে ভরতাম
ভিড়ের ভেতরে হারানোর ভয়ে ওর দুটো হাত ধরতাম
মাঝে মাঝে দূরে সরতাম।

মাদারহুদার চৈতি মেলায় দুজন সকালে ছুটতাম
লোকের ছড়ানো বাতাসা গজাও হইচই করে খুটতাম
টাক ডুমা ডুম বাদ্যির তালে আহ্লাদ কত লুটতাম
ফুল হয়ে যেন ফুটতাম
বিকেলে আবার মওলা দাদার আমের বাগানে জুটতাম।

মমতা আদর মায়া বন্ধনে বেঁধে ওকে কাছে টানতাম
দেখা না পেলেই কী যে কী মায়ায় ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কানতাম
দাবি দাওয়া দিলে মানতাম
কিন্তু হঠাৎ ওই সোনা মুখ হারিয়ে যাবে কি জানতাম
পারা গেলে সেই রাঙা শৈশব আবার ফিরিয়ে আনতাম।
২৫.০২.২০১৩
হাজিবাড়ি, মুক্তিপাড়া, চুয়াডাঙ্গা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন