আফসানা
ক্লাস টুতে পড়ে। কোরবানির ছুটিতে মামাবাড়ি বেড়াতে
যায় সে। সঙ্গে বড় ভাই আফরোজ। জোছনা ভরা রাত। বিদ্যুত চলে গেলে মামি উঠোনে পাটি পেতে দেন। ওদের সাথে বড় মামাও পাটিতে বসেন। আফসানা বায়না ধরে আজ তাকে একটা ফুলপরীর গল্প শোনাতে হবে। বড় মামা খুব রসিক মানুষ। ওরা যখনই মামার বাড়ি যায় তখনই তিনি
গল্প শোনান। রূপকথার গল্প। রাক্ষস খোক্ষসের গল্প। নবাব আর রাজা-রানীর গল্প। তবে মামা আজ বলতে লাগলেন পরীর
গল্প। পরীরা কোথায় থাকে। কোথায় তাদের বাড়ি। তারা কী খায়। কত না প্রশ্ন আফসানার। মামা মজা করে করে জবাব দেন। গল্প শুনতে শুনতে উঠোনের পাটিতেই ঘুমিয়ে গেল আফসানা। ঘুমোনোর সাথে সাথে স্বপ্নের রাজ্যে চলে গেল। দেখতে শুরু করল স্বপ্ন।
আফসানা একটা ফুল বাগানে প্রজাপতি দেখছিলো। কয়েকটা রঙিন প্রজাপতি ফুলে ফুলে মধু খাচ্ছে। এমন সময় আকাশ থেকে উড়ে এলো দুই পরী। সাদা পাখনা ওয়ালা পরী। তাদের শরীর ফুলে ফুলে ঢাকা। হরেক রকম ফুল। মুখের হাসিতে যেন মুক্ত ঝরে পড়ছে। ওরা এসে বলল আমরা ফুলপরী। ফুলের দেশে আমাদের বাড়ি। তুমি কি যাবে আমাদের দেশে?
দুই পরীর কথা শুনে খুশিতে বাগবাগ হয়ে উঠল আফসানা। সে ওদের পানে খানিক এগিয়ে গেল। বললো অবশ্যই আমি তোমাদের দেশে যাব। ফুলের সাথে খেলব, ঘুরব আর মজা করব। কথা শেষ হতে না হতেই আফসানাকে ডানার মাঝে তুলে নিয়ে দুই পরী উড়াল দিল। কত পাহাড় কত অরণ্য ছাড়িয়ে নীল আকাশের সাদা
মেঘের সারি ডিঙিয়ে ছুটলো তারা তাদের দেশে। পার হলো চাঁদের দেশ। তারার দেশ। কত না গ্রহের দেশ। তার পরে ফুলপরীদের দেশ। পরীদের দেশে ঢুকতেই ছুটে এলো
আফসানার বয়সী ফুলপরীদের মেয়েরা। তাদের হাতে ফুলের ডালি। তারা ফুল ছিটিয়ে ছিটিয়ে আফসানাকে বরণ করে নিলো। কী আনুষ্ঠানিকতা। আফসানা অবাক হলো। এ কী! যেদিকে তাকাই ফুল আর ফুল। এ ফুল তো আমাদের দেশের মতো সাধারণ ফুল নয়। একেকটি ফুল দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়। চার পাশ গন্ধে মৌ মৌ করছে। পরীর দেশের ফুলের রঙ-রূপও আলাদা।
হঠাত ফুলপরীদের আরও দুই মেয়ে ছুটে এলো আফসানার কাছে। বলল আজ থেকে তুমি আমাদের বন্ধু। তারা আফসানার গায়ে তাদের দেশের ফুলের তৈরি পোশাক পরিয়ে দিল। বলল এবার চলো রানী মা’র কাছে যাই। আফসানা প্রশ্ন করে রানী মা কে?
:রানী মা আমাদের সবার রাণী। মানে ফুলপরীদের রানী।
:উনি কোথায় থাকেন?
:চলো নিয়ে যাই, দেখে নিয়ো।
ফুলপরীদের মেয়েরা ডানায় চড়িয়ে ওদের রানী মা’র কাছে নিয়ে গেল আফসানাকে। রানী মাকে দেখে মন ভরে গেল তার। বিরাট এক সিংহাসনে বসে আছেন তিনি। ফুলের সিংহাসন। রানী মা’র সারা শরীরে হাজারো রঙের ফুল। আফসানাকে দেখেই ফুলপরীদের রাণী উঠে
দাঁড়ালেন। এক গাল হেসে বললেন ‘এসো এসো আফসানা। ফুল পরীদের রাজ্যে তোমাকে
স্বাগত জানাই।’ এবার আফসানার সারা দেহে হরেক রকমের গয়না পরিয়ে দিলেন তিনি। নূপুর, নোলক, চিকা,
হার, ব্রেসলেট আরও কত গয়না। তবে সব গয়নাই ফুলের তৈরি। এরপর আরেক দল ফুলপরী নিয়ে এলো
খাবার। হরেক রকমের রান্নাবাড়া। খাওয়ার আগেই গন্ধে ওর মুখে পানি জমে গেল। খাওয়া দাওয়া করে দেখল পৃথিবীতে এমন স্বাদের খাবার সে কোনোদিনও খায়নি। এখানকার মাছ মাংসের আলাদা স্বাদ। যা খেতে ইচ্ছে, তা বলতে না বলতেই হাজির। এখানে কোনো কাজ নেই। শুধু খাওয়া আর আনন্দ করা। আফসানা খুব খুশি হলো। সে বললো আমি আর কোনো দিন এদেশ
থেকে ফিরে যাব না। হাসলেন পরীদের রানী। তিনি বললেন এখানে থাকা যায় না। চিরস্থায়ী থাকতে হলে অনেক শর্ত আছে।
:কী কী সেই শর্ত বলুন রানী মা।
:তুমি কি পারবে তা পালন করতে?
:চেষ্টা করে দেখি রানী মা।
এখানে থাকতে হলে মিথ্যা বলা যাবে না। পরীর দেশে মিথ্যা চলে না। হিংসা চলে না। চলে না গালাগালি, মারামারি। পৃথিবীর কোনো বাজে আচরণ করা যাবে না। আফসানা খুশিতে আটখানা। সে বলল আমি তো এটাই চাই।
রানী মা বললেন- এখানে থাকো। তবে সাবধান! শর্ত ভাঙলে এক
ধাক্কায় পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেয়া হবে।
আফসানা এসব স্বপ্নে দেখছিল। হঠাৎ বড় মামা আফসানার পিঠে ধাক্কা দিতেই ওর ঘুম ভেঙে গেল। দেখল সে পরীর দেশে নেই। পাশমোড়া দিয়ে উঠে বসে চোখ কচলাতে কচলাতে কান্না শুরু করল। বড় মামার ওপর তার খুব রাগ হলো। তিনি কেন তাকে জাগালেন। না হলে সে তো ফুলপরীদের দেশেই থাকত।
(কোর্টপাড়া, চুয়াডাঙ্গা।)
০১.০৯.২০১৭
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন