বুধবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৭

ফুলপরীদের দেশে

আফসানা ক্লাস টুতে পড়েকোরবানির ছুটিতে মামাবাড়ি বেড়াতে যায় সেসঙ্গে বড় ভাই আফরোজজোছনা ভরা রাতবিদ্যুত চলে গেলে মামি উঠোনে পাটি পেতে দেনওদের সাথে বড় মামাও পাটিতে বসেনআফসানা বায়না ধরে আজ তাকে একটা ফুলপরীর গল্প শোনাতে হবেবড় মামা খুব রসিক মানুষওরা যখনই মামার বাড়ি যায় তখনই তিনি গল্প শোনানরূপকথার গল্পরাক্ষস খোক্ষসের গল্পনবাব আর রাজা-রানীর গল্পতবে মামা আজ বলতে লাগলেন পরীর গল্পপরীরা কোথায় থাকেকোথায় তাদের বাড়িতারা কী খায়কত না প্রশ্ন আফসানারমামা মজা করে করে জবাব দেনগল্প শুনতে শুনতে উঠোনের পাটিতেই ঘুমিয়ে গেল আফসানাঘুমোনোর সাথে সাথে স্বপ্নের রাজ্যে চলে গেলদেখতে শুরু করল স্বপ্ন
   
আফসানা একটা ফুল বাগানে প্রজাপতি দেখছিলোকয়েকটা রঙিন প্রজাপতি ফুলে ফুলে মধু খাচ্ছেএমন সময় আকাশ থেকে উড়ে এলো দুই পরীসাদা পাখনা ওয়ালা পরীতাদের শরীর ফুলে ফুলে ঢাকাহরেক রকম ফুলমুখের হাসিতে যেন মুক্ত ঝরে পড়ছেওরা এসে বলল আমরা ফুলপরীফুলের দেশে আমাদের বাড়িতুমি কি যাবে আমাদের দেশে? দুই পরীর কথা শুনে খুশিতে বাগবাগ হয়ে উঠল আফসানাসে ওদের পানে খানিক এগিয়ে গেলবললো অবশ্যই আমি তোমাদের দেশে যাবফুলের সাথে খেলব, ঘুরব আর মজা করবকথা শেষ হতে না হতেই আফসানাকে ডানার মাঝে তুলে নিয়ে দুই পরী উড়াল দিলকত পাহাড় কত অরণ্য ছাড়িয়ে নীল আকাশের সাদা মেঘের সারি ডিঙিয়ে ছুটলো তারা তাদের দেশেপার হলো চাঁদের দেশতারার দেশকত না গ্রহের দেশতার পরে ফুলপরীদের দেশপরীদের দেশে ঢুকতেই ছুটে এলো আফসানার বয়সী ফুলপরীদের মেয়েরাতাদের হাতে ফুলের ডালিতারা ফুল ছিটিয়ে ছিটিয়ে আফসানাকে বরণ করে নিলোকী আনুষ্ঠানিকতাআফসানা অবাক হলোএ কী! যেদিকে তাকাই ফুল আর ফুলএ ফুল তো আমাদের দেশের মতো সাধারণ ফুল নয়একেকটি ফুল দেখলে চোখ জুড়িয়ে যায়চার পাশ গন্ধে মৌ মৌ করছেপরীর দেশের ফুলের রঙ-রূপও আলাদা
হঠাত ফুলপরীদের আরও দুই মেয়ে ছুটে এলো আফসানার কাছেবলল আজ থেকে তুমি আমাদের বন্ধুতারা আফসানার গায়ে তাদের দেশের ফুলের তৈরি পোশাক পরিয়ে দিলবলল এবার চলো রানী মার কাছে যাইআফসানা প্রশ্ন করে রানী মা কে?
:
রানী মা আমাদের সবার রাণীমানে ফুলপরীদের রানী
:
উনি কোথায় থাকেন?
:
চলো নিয়ে যাই, দেখে নিয়ো
ফুলপরীদের মেয়েরা ডানায় চড়িয়ে ওদের রানী মার কাছে নিয়ে গেল আফসানাকেরানী মাকে দেখে মন ভরে গেল তারবিরাট এক সিংহাসনে বসে আছেন তিনিফুলের সিংহাসনরানী মার সারা শরীরে হাজারো রঙের ফুলআফসানাকে দেখেই ফুলপরীদের রাণী উঠে দাঁড়ালেনএক গাল হেসে বললেনএসো এসো আফসানাফুল পরীদের রাজ্যে তোমাকে স্বাগত জানাইএবার আফসানার সারা দেহে হরেক রকমের গয়না পরিয়ে দিলেন তিনিনূপুর, নোলক, চিকা, হার, ব্রেসলেট আরও কত গয়নাতবে সব গয়নাই ফুলের তৈরিএরপর আরেক দল ফুলপরী নিয়ে এলো খাবারহরেক রকমের রান্নাবাড়াখাওয়ার আগেই গন্ধে ওর মুখে পানি জমে গেলখাওয়া দাওয়া করে দেখল পৃথিবীতে এমন স্বাদের খাবার সে কোনোদিনও খায়নিএখানকার মাছ মাংসের আলাদা স্বাদযা খেতে ইচ্ছে, তা বলতে না বলতেই হাজিরএখানে কোনো কাজ নেইশুধু খাওয়া আর আনন্দ করাআফসানা খুব খুশি হলোসে বললো আমি আর কোনো দিন এদেশ থেকে ফিরে যাব নাহাসলেন পরীদের রানীতিনি বললেন এখানে থাকা যায় নাচিরস্থায়ী থাকতে হলে অনেক শর্ত আছে
:
কী কী সেই শর্ত বলুন রানী মা
:
তুমি কি পারবে তা পালন করতে?
:
চেষ্টা করে দেখি রানী মা
এখানে থাকতে হলে মিথ্যা বলা যাবে নাপরীর দেশে মিথ্যা চলে নাহিংসা চলে নাচলে না গালাগালি, মারামারিপৃথিবীর কোনো বাজে আচরণ করা যাবে নাআফসানা খুশিতে আটখানাসে বলল আমি তো এটাই চাই
রানী মা বললেন- এখানে থাকোতবে সাবধান! শর্ত ভাঙলে এক ধাক্কায় পৃথিবীতে পাঠিয়ে দেয়া হবে
আফসানা এসব স্বপ্নে দেখছিলহঠাৎ বড় মামা আফসানার পিঠে ধাক্কা দিতেই ওর ঘুম ভেঙে গেলদেখল সে পরীর দেশে নেইপাশমোড়া দিয়ে উঠে বসে চোখ কচলাতে কচলাতে কান্না শুরু করলবড় মামার ওপর তার খুব রাগ হলোতিনি কেন তাকে জাগালেননা হলে সে তো ফুলপরীদের দেশেই থাকত 

(কোর্টপাড়া, চুয়াডাঙ্গা।)

০১.০৯.২০১৭

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন