ভৈরব
নদের পাড়ে আফসানার নানা বাড়ি। গ্রামের
নাম বাঘাডাঙ্গা। চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার একটি গ্রাম। আগে এই গ্রামের আশপাশ এলাকা জঙ্গলে ঘেরা ছিল। সেখানে ছিল বড় বড় বাঘের বসবাস। রাতে ভয়ঙ্কর আওয়াজ তুলে গর্জন দিত তারা। তবে জঙ্গল কেটে সাবাড় করে ফেলেছে এলাকার লোকজন। এরপর বাঘও উধাও। মুরব্বিরা বলেন এককালে বাঘ ছিল বলেই গ্রামের নাম হয়েছে বাঘাডাঙ্গা। গ্রামের গা ঘেঁষে বয়ে গেছে ভৈরব নদ। সারা বছর কুলকুল করে ¯্রােত বয়। গ্রামের লোকজন ঘাটে ঘাটে গোসল করে। কেউ কেউ সাঁতার কেটে এপার ওপার যায়। গেল বছর এই নদীতেই আফসানা সাঁতার শিখেছে। সেও এপার থেকে ওপারে যেতে পারে। যখনই আফসানা নানা বাড়ি আসে হাত-পা নেড়ে সাঁতার
কাটে এই নদে। ওর খুব ভালো লাগে।
আফসানারা
চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে থাকে। একরকম
বন্দী জীবন। সব কিছু ঘরের মধ্যেই। সামান্য খেলাধুলার মুক্ত জায়গাও নেই এখানে। আফসানা ক্লাস ফোরে পড়ে। চলতে হয় রুটিন মাফিক। স্কুল আর পড়াশোনা নিয়েই থাকতে হয় ওকে। এবারের কোরবানির ঈদের ছুটিতে বাবা-মার সঙ্গে নানাবাড়ি
বাঘাডাঙ্গায় বেড়াতে গিয়েছিল সে। কার্পাসডাঙ্গায়
বাসে নেমে এক কিলোমিটার পায়ে হেঁটে গেলেই বাঘাডাঙ্গা গ্রাম। গ্রামে পৌঁছানোর আগেই দূর থেকে একটা দৃশ্য দেখে অবাক হলো
সে। মায়ের হাঁটা থামিয়ে দিয়ে বলল- আম্মু দ্যাখো দ্যাখো
নদীর দু’ধার কী সুন্দর লাগছে। বাবা বললেন হ্যা ওগুলো কাশফুল। শরৎকালে ফোটে।
:শরৎকাল মানে কী আব্বু?
:আমাদের দেশে দু’মাস পর পর ঋতু বদল হয়। একেই কাল বলে। ভাদ্র আর আশ্বিন মিলে শরৎ ঋতু। মানে শরৎকাল। জবাব
দেন ওর বাবা।
:ও। তাহলে
অন্য সময় ফোটে না কেন?
:আষাঢ় আর শ্রাবণ মাস মিলে বর্ষাকাল। এ সময় খুব বৃষ্টি হয়। তাছাড়া বর্ষাকালে পানিতে নদ টইটম্বুর হয়ে থাকে। বর্ষার শেষে পানি কমে নদের দু’ধারে চর জাগে। ওই চরে কাশবনের জন্ম হয়। আর শরৎ এলেই তাতে ফুল ফোটে। তখন কাশবন দেখতে খুব ভালো লাগে। এখন সেই শরৎকাল। তাই কাশবন এত সুন্দর লাগছে। কাছে গেলে আরও ভালো লাগবে।
:আমি ওখানে যাব আব্বু।
:আচ্ছা কাল তোমাকে নদের চর দেখাব। মেলা কাশফুল তুলে দেব।
:কী মজা কী মজা আব্বু খুব ভালো।
কথাগুলো
শেষ করে আবার হাঁটা শুরু করল ওরা। তবে
আফসানার কথা থেমে নেই। ওর মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগে। আচ্ছা বর্ষাকাল আর শরৎকালের কথা না হয় শুনলাম। আর কী কী কাল আছে? প্রশ্ন করে বাবার কাছে। বাবা
ভালো করে বুঝিয়ে দেন। আমাদের দেশে মোট ছয়টি ঋতু আছে। মানে ছয়টি কাল। এ গুলো হলো গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্তকাল। দু’মাস পর পর দেশের রূপ পাল্টায়। এ কারণেই আগের মানুষ এই নামগুলো দিয়ে গেছেন।
প্রায় সন্ধ্যা ছুঁইছুঁই। নানাবাড়িতে পৌঁছালো আফসানা। সঙ্গে বাবা-মা। আফসানা আজ বড্ড খুশি। একেবারে আনন্দে আটখানা। কাল সে কাশফুল দেখতে যাবে। বাড়িতে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে সেসব কথা সবার কাছে বলা সারা। ছোট মামাকেও সঙ্গে যাওয়ার জন্য বলে সে। ছোট মামাও রাজি। রাতে খাওয়া দাওয়া সেরে শুয়ে পড়ে আফসানা। কিন্তু ওর চোখে ঘুম আসে না। মুখে শুধু কাশফুল দেখতে যাওয়ার কথা। এই ফাঁকে সে ছয় ঋতুর নাম মুখস্ত করে ফেলল। কোন কোন মাসে কোন ঋতু তাও শিখে ফেলল সে। পরদিন ভৈরব নদের চরে কাশফুল দেখতে যাওয়ার কথা। কিন্তু সকালে আর যাওয়া হলো না। বিকেলে বের হলো ওরা। আফসানার সঙ্গে বাবা-মা আর ছোট মামা। বেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পর নদীর পাড় বেয়ে নিচে নামল ওরা। আফসানার চোখ জুড়িয়ে গেল। কী সুন্দর। সাদা
ফুলে ফুলে ফকফক করছে নদীর চর। ঝিরঝির
বাতাসে কাশফুলগুলো দোল খাচ্ছে। বাবা
বেশ কিছু কাশফুল তুলে তুলে আফসানাার হাতে দিলেন। ও সেগুলো নেড়ে নেড়ে দেখতে লাগল। কী নরম। কী মোলায়েম। কাশফুলের তুলতুলে পালকগুলো দুই চোয়ালে বার বার
ছোঁয়ায় সে। ছোট মামা মোবাইল ক্যামেরায় দৃশ্যগুলো ধারণ করতে
লাগলেন। খুশিতে আফসানার দু’চোখ চকচক করে উঠল। বলল আরও ফুল দাও আব্বু।
:এত ফুল কী করবে?
: আমি শহরে নিয়ে যাব। সব বন্ধুকে একটা একটা করে দেব। ওরা তো কোনোদিন এ ফুল দ্যাখেনি। কাশফুল পেলে ওরা খুব খুশি হবে। তাছাড়া একটা নতুন ফুলও ওদের চেনা হবে। আফসানার কথা শুনে মুচকি মুচকি হাসলেন ওর মা।
কোর্টপাড়া, চুয়াডাঙ্গা
০৬.০৯.২০১৭
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন