বুধবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৭

ভৈরবচরের কাশফুল



ভৈরব নদের পাড়ে আফসানার নানা বাড়িগ্রামের নাম বাঘাডাঙ্গাচুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার একটি গ্রামআগে এই গ্রামের আশপাশ এলাকা জঙ্গলে ঘেরা ছিলসেখানে ছিল বড় বড় বাঘের বসবাসরাতে ভয়ঙ্কর আওয়াজ তুলে গর্জন দিত তারাতবে জঙ্গল কেটে সাবাড় করে ফেলেছে এলাকার লোকজনএরপর বাঘও উধাওমুরব্বিরা বলেন এককালে বাঘ ছিল বলেই গ্রামের নাম হয়েছে বাঘাডাঙ্গাগ্রামের গা ঘেঁষে বয়ে গেছে ভৈরব নদসারা বছর কুলকুল করে ¯্রােত বয়গ্রামের লোকজন ঘাটে ঘাটে গোসল করেকেউ কেউ সাঁতার কেটে এপার ওপার যায়গেল বছর এই নদীতেই আফসানা সাঁতার শিখেছেসেও এপার থেকে ওপারে যেতে পারেযখনই আফসানা নানা বাড়ি আসে হাত-পা নেড়ে সাঁতার কাটে এই নদেওর খুব ভালো লাগে
আফসানারা চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরে থাকেএকরকম বন্দী জীবনসব কিছু ঘরের মধ্যেইসামান্য খেলাধুলার মুক্ত জায়গাও নেই এখানেআফসানা ক্লাস ফোরে পড়েচলতে হয় রুটিন মাফিকস্কুল আর পড়াশোনা নিয়েই থাকতে হয় ওকেএবারের কোরবানির ঈদের ছুটিতে বাবা-মার সঙ্গে নানাবাড়ি বাঘাডাঙ্গায় বেড়াতে গিয়েছিল সেকার্পাসডাঙ্গায় বাসে নেমে এক কিলোমিটার পায়ে হেঁটে গেলেই বাঘাডাঙ্গা গ্রামগ্রামে পৌঁছানোর আগেই দূর থেকে একটা দৃশ্য দেখে অবাক হলো সেমায়ের হাঁটা থামিয়ে দিয়ে বলল- আম্মু দ্যাখো দ্যাখো নদীর দুধার কী সুন্দর লাগছেবাবা বললেন হ্যা ওগুলো কাশফুলশরৎকালে ফোটে
:শরৎকাল মানে কী আব্বু?
:আমাদের দেশে দুমাস পর পর ঋতু বদল হয়একেই কাল বলেভাদ্র আর আশ্বিন মিলে শরৎ ঋতুমানে শরৎকালজবাব দেন ওর বাবা
:তাহলে অন্য সময় ফোটে না কেন?
:আষাঢ় আর শ্রাবণ মাস মিলে বর্ষাকালএ সময় খুব বৃষ্টি হয়তাছাড়া বর্ষাকালে পানিতে নদ টইটম্বুর হয়ে থাকেবর্ষার শেষে পানি কমে নদের দুধারে চর জাগেওই চরে কাশবনের জন্ম হয়আর শরৎ এলেই তাতে ফুল ফোটেতখন কাশবন দেখতে খুব ভালো লাগেএখন সেই শরৎকালতাই কাশবন এত সুন্দর লাগছেকাছে গেলে আরও ভালো লাগবে
:আমি ওখানে যাব আব্বু
:আচ্ছা কাল তোমাকে নদের চর দেখাবমেলা কাশফুল তুলে দেব
:কী মজা কী মজা আব্বু খুব ভালো
কথাগুলো শেষ করে আবার হাঁটা শুরু করল ওরাতবে আফসানার কথা থেমে নেইওর মনের মধ্যে প্রশ্ন জাগেআচ্ছা বর্ষাকাল আর শরৎকালের কথা না হয় শুনলামআর কী কী কাল আছে? প্রশ্ন করে বাবার কাছেবাবা ভালো করে বুঝিয়ে দেনআমাদের দেশে মোট ছয়টি ঋতু আছেমানে ছয়টি কালএ গুলো হলো গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, শীত ও বসন্তকালদুমাস পর পর দেশের রূপ পাল্টায়এ কারণেই আগের মানুষ এই নামগুলো দিয়ে গেছেন
        প্রায় সন্ধ্যা ছুঁইছুঁইনানাবাড়িতে পৌঁছালো আফসানাসঙ্গে বাবা-মাআফসানা আজ বড্ড খুশিএকেবারে আনন্দে আটখানাকাল সে কাশফুল দেখতে যাবেবাড়িতে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে সেসব কথা সবার কাছে বলা সারাছোট মামাকেও সঙ্গে যাওয়ার জন্য বলে সেছোট মামাও রাজি  রাতে খাওয়া দাওয়া সেরে শুয়ে পড়ে আফসানাকিন্তু ওর চোখে ঘুম আসে নামুখে শুধু কাশফুল দেখতে যাওয়ার কথাএই ফাঁকে সে ছয় ঋতুর নাম মুখস্ত করে ফেললকোন কোন মাসে কোন ঋতু তাও শিখে ফেলল সেপরদিন ভৈরব নদের চরে কাশফুল দেখতে যাওয়ার কথাকিন্তু সকালে আর যাওয়া হলো নাবিকেলে বের হলো ওরাআফসানার সঙ্গে বাবা-মা আর ছোট মামাবেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পর নদীর পাড় বেয়ে নিচে নামল ওরাআফসানার চোখ জুড়িয়ে গেলকী সুন্দরসাদা ফুলে ফুলে ফকফক করছে নদীর চরঝিরঝির বাতাসে কাশফুলগুলো দোল খাচ্ছেবাবা বেশ কিছু কাশফুল তুলে তুলে আফসানাার হাতে দিলেনও সেগুলো নেড়ে নেড়ে দেখতে লাগলকী নরমকী মোলায়েমকাশফুলের তুলতুলে পালকগুলো দুই চোয়ালে বার বার ছোঁয়ায় সেছোট মামা মোবাইল ক্যামেরায় দৃশ্যগুলো ধারণ করতে লাগলেনখুশিতে আফসানার দুচোখ চকচক করে উঠলবলল আরও ফুল দাও আব্বু
:এত ফুল কী করবে?
: আমি শহরে নিয়ে যাবসব বন্ধুকে একটা একটা করে দেবওরা তো কোনোদিন এ ফুল দ্যাখেনিকাশফুল পেলে ওরা খুব খুশি হবেতাছাড়া একটা নতুন ফুলও ওদের চেনা হবেআফসানার কথা শুনে মুচকি মুচকি হাসলেন ওর মা
কোর্টপাড়া, চুয়াডাঙ্গা
০৬.০৯.২০১৭

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন