মঙ্গলবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২১

একজন আলোর মানুষ অধ্যক্ষ হামিদুল হক মুন্সী

একজন আলোর মানুষ অধ্যক্ষ হামিদুল হক মুন্সী। জীবনভর শিক্ষার আলো ছড়িয়েছেন দেশজুড়ে। পেয়েছেন অনেক খ্যাতি, যশ আর অসংখ্য সম্মাননা। একজন আদর্শ শিক্ষক হিসেবে তার জুড়ি নেই। একাধারে তিনি শিক্ষক, সংগঠক, ইতিহাস গবেষক এবং একাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা। সাহিত্যাঙ্গনেও রয়েছে তার অসামান্য অবদান। অবসর জীবনযাপন করলেও শেখানোর নেশা থেকে দূরে সরে যাননি হামিদুল হক মুন্সী। ঘরে বসে হলেও তিনি অনবরত শিক্ষার আলো ছড়িয়ে চলেছেন নানাভাবে। চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ হামিদুল হক মুন্সী শুধু এক প্রতিষ্ঠানেই থেমে থাকেননি। অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন নড়াইলের আবদুল হাই সিটি কলেজ, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর কলেজ, সিরাজগঞ্জের পুলিশ লাইন্স কলেজ, উল্লাপাড়া বিজ্ঞান কলেজ, চাঁদপুরের সুজাতপুর কলেজ ও নাসিরকোট শহিদ স্মৃতি কলেজে। এছাড়া প্রতিষ্ঠাতা ও প্রতিষ্ঠান প্রধান ছিলেন মোমেনা আলী বিজ্ঞান স্কুল ও সিরাজগঞ্জ পুলিশ লাইন্স স্কুল। চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার মোচাইনগর গ্রামের প্রয়াত লুৎফল হক মুন্সী ও হামিদা খাতুনের ছেলে হামিদুল হক মুন্সীর জন্ম ১৯৫৭ সালের ১৬ মার্চ। চুয়াডাঙ্গা পৌর কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে শিক্ষকতা জীবন শুরু করা এই আলোর মানুষ ২০১৭ সালেন ১৬ মার্চ চাঁদপুর জেলার হাজিগঞ্জের নাসিরকোট শহিদ স্মৃতি কলেজ থেকে অবসর গ্রহণ করেন। কিন্তু থেমে নেই তার আলো ছড়ানোর কাজ। শতাধিক গ্রন্থের লেখক ও প্রকাশক তিনি। নিজ হাতে সম্পাদনা করেছেন অসংখ্য পত্র-পত্রিকা। চুয়াডাঙ্গা, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহ জেলার প্রথম দৈনিক সংবাদপত্র দৈনিক মাথাভাঙ্গা পত্রিকারও প্রথম সম্পাদক ছিলেন তিনি। চুয়াডাঙ্গা জেলা শহরের হাসপাতাল সড়কের নিরিবিলি এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন হামিদুল হক মুন্সী। স্ত্রী মালেকা হক মাখনও অধ্যাপনা করতেন। তিনিও অবসর জীবনযাপন করছেন। তাদের একমাত্র পুত্রসন্তান মাহমুদুল হক মুন্সী বাঁধন জাপান প্রবাসী। মানুষ গড়ার কারিগর অধ্যক্ষ হামিদুল হক মুন্সী কর্মজীবনে বহু সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য শ্রেষ্ঠ কলেজ শিক্ষক (নড়াইল জেলা ১৯৯২), শ্রেষ্ঠ শিক্ষা সংগঠক (নড়াইল জেলা ১৯৯৭), শ্রেষ্ঠ অধ্যক্ষ (নড়াইল জেলা ১৯৯৮)। শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখায় তিনি ১৯৯৮ সালে মধুসূদন পদকে ভূষিত হন। অধ্যক্ষ হামিদুল হক মুন্সীর লেখা অন্যতম সেরা কাব্যগন্থের মধ্যে রয়েছে ‘বয়েসী রোদের বিউগল, মাধবী শুধু তোমাকেই, অবরুদ্ধ নগরে আছি।’ তার লেখা ইতিহাস গ্রন্থের মধ্যে আছে চুয়াডাঙ্গা জেলার ইতিহাস, চুয়াডাঙ্গা-৭১, নড়াইল পরিচিতি। তার অন্যতম অনুবাদ গ্রন্থ চুয়াডাঙ্গা গেজেট। চুয়াডাঙ্গার খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব হামিদুল হক মুন্সী কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ এ পর্যন্ত অসংখ্য সম্মাননা ও পদক পেয়েছেন। এর মধ্যে অন্যতম বাউল সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব পদক, গুণী শিক্ষক সম্মাননা, সময়ের সাহসী পিতা পদক, মওলানা তর্কবাগীশ গুণিজন পদক, আলোকিত মানুষ পদক, সেরা শিক্ষক পদক, সাংবাদিক মাসুদ স্মৃতি সাহিত্য পদক, ডা. লুৎফর রহমান পদক, সুশিক্ষার ফেরিওয়ালা পদক, সততা স্বর্ণপদক, ইউনেস্কো শিক্ষাপদক, কাঙাল হরিনাথ পদক, সুশিক্ষার জাদুকর পদক, লেখক মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা প্রভৃতি। চাকরি জীবন থেকে অবসর নেওয়া হামিদুল হক মুন্সীর ছড়ানো শিক্ষার আলো দিন দিন আরও প্রজ্জ্বলিত হচ্ছে। জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছানো এই আলোর মানুষ কর্মদ্যমে এখনও চঞ্চল। তিনি বতর্মানে চুয়াডাঙ্গার ভিকুইন্স পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। হামিদুল হক মুন্সী জানান, আমি বয়সের কারণে চাকরি থেকে অবসর নিয়েছি বটে, কাজ আমাকে থেমে থাকতে দেয় না। তাই যতদিন বেঁচে আছি শিক্ষার আলো ছড়িয়েই যাব। আর লেখালেখির নেশা তো আছেই। ০৪.১০.২০২১ প্রকাশিত দৈনিক যুগান্তর (০৫.১০.২০২১)

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন