বুধবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৭

গাছপাকা কাঁঠাল

সোজি ক্লাস সিক্সে আর কাব্য পড়ে ফোরেপর পর দুদিন ওদের স্কুল ছুটিওরা মার কাছে বায়না ধরল নানাবাড়ি যাবেচুয়াডাঙ্গা জেলা শহর থেকে নানাবাড়ি প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরগ্রামের নাম বাঘাডাঙ্গাবিকেলে মায়ের সঙ্গে বাসে চড়ে রওনা দিল ওরাতারপরে রিকশাভ্যানশেষে কিছুপথ হেঁটেও যেতে হয় সেই গ্রামেনানাবাড়ি পৌঁছুতে সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁইরাতে দুভাই-বোন ছোট মামার কাছে আবদার করল বাগানে যাবেমামাদের মাঠে অনেক বাগানআম, কাঁঠাল, নারকেল আর সারি সারি সুপারি বাগানদেখলে জান জুড়িয়ে যায়মামা বললেন- ঠিক আছে আমরা সকালে কাদ্দাগাড়ির মাঠের বড় কাঁঠাল বাগানে যাবমামার কথায় ওরা বড্ড খুশি হলো
সকালে বাগানে রওনা হলো তারাবাড়ি থেকে প্রায় এক মাইলের পথক্ষেতের আল বেয়ে বেয়ে হাঁটছে ওরাকী মজা, কত সুন্দর পথ! কাব্য একা একাই বলেবাগানে ঢুকেই কাঁঠালপাকা গন্ধে প্রাণটা চনমন করে উঠল সোজিরখুশিতে বাগবাগ হয়ে সে বলল- মামা গাছে মনে হয় কাঁঠাল পেকেছেছোট মামা ওর পানে তাকিয়ে একটু হেসে জবাব দিলেন মনে হয়সোজি আবার বলল- মামা কী মিষ্টি গন্ধ জান ভরে যাচ্ছেগাছে উঠে দ্যাখোনা মামামামা খুব একটা আমল দিলেন না ওর কথায়সামনে পানে আরও হেঁটে চললেনপিছে পিছে সোজি আর কাব্যবিশাল কাঁঠাল বাগানএ মাথা থেকে শেষ মাথা পর্যন্ত প্রায় একশটা গাছগাছে গাছে অসংখ্য কাঁঠাল ঝুলছেএকেক গাছে একেক রকমকোনো গাছে ছোটআবার কোনো কোনো গাছের কাঁঠাল বিশালকায় বড়ওজন করলে একেকটা প্রায় আধমণহঠাৎ গাছের ডালে একটা পাখি দেখিয়ে কাব্য অবাক হয়ে বলল- মামা দ্যাখো দ্যাখো পাখিটার কত্ত বড় লেজএমন পাখি কাব্য জীবনেও দেখেনিসোজিও কপালে চোখ তুলে বলল- ওমা তাই তো! ওটা কী পাখি মামা?
নাম জানিনে, জবাব দিলেন মামাবললেন এলাকার মানুষ ওটাকে সাহেব পাখি বলেকথা বলতে বলতে মামা এগিয়ে চলেনতিনি গিয়ে থামলেন একটা বুড়ো কাঁঠালগাছের গোড়ায়এ গাছের কাঁঠাল দেখতে ছোট ছোটএবার ঝোড় থেকে একটা লাঠির মতো ডাল ভেঙে নিলেন মামাএরপর লুঙ্গিতে কাছা মেরে বুড়ো গাছটায় উঠে পড়লেনএকের পর এক কাঁঠালে লাঠির ঘা মারছেন তিনিসোজি আর কাব্য নিচ থেকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছেওরা বুঝল না একের পর এক কাঁঠালে আঘাত করার কারণহঠাৎ ঘা মারা থামিয়ে মামা বললেন- এ্যায় এবার হয়েছেকী হয়েছে মামা? সোজি আর কাব্য এক সঙ্গে প্রশ্ন করলমামা জবাব দিলেন- পাকা কাঁঠাল পেয়েছিমামা বোঁটা থেকে উঁপড়ে কাঁঠালটা নিচে নামিয়ে আনলেনএবার ভেঙে দিয়ে বললেন- নে খাকাঁটালের সারগুলো সোনার মতো চকচক করছেসোজি আর কাব্য টপাটপ তুলে তুলে মুখে পুরতে লাগলউহ কী স্বাদ মামা- খেতে খেতে বলল সোজিমামা এমন মিষ্টি কাঁঠাল আমি জম্মেও খাইনি বলল কাব্যখেতে খেতে সোজি প্রশ্ন করল- মামা তুমি এত গাছ থুয়ে এই বুড়ো গাছটার কাঁঠাল পাড়লে কেন? আর পাড়ার আগে লাঠি দিয়ে কাঁঠালগুলো পেটাচ্ছিলে কেন? মামা একগাল হেসে উত্তর দিলেনবললেন এই গাছটার কাঁঠাল সবচেসুস্বাদুতোর নানা এই গাছটার নাম দিয়েছেন রসগোল্লা ভোগআর কাঁঠাল পেটানোর কারণ হিসেবে বললেন, কাঁঠালে ঘা দিলে বোঝা যায় কোনটা পাকা আর কোনটা কাঁচাকিভাবে মামা? ফের প্রশ্ন করে কাব্যমামা বললেন- যে কাঁঠালটি কাঁচা সেটায় ঢপঢপ শব্দ হয়আর পাকা কাঁঠালে ঘা দিলে থপ থপ করেও মা তাই নাকি মামা! ওরা অবাক হলোমামা ওদের কথা থামিয়ে দিয়ে বললেন কথা বন্ধ করে বেশি করে খাএ এক্কেবারে খাঁটি জিনিসএতে কোনো কেমিক্যাল নেই বুঝলিওই যে শুনিসনি ফরমালিন, কারবাইড এসবের বালাই নেইগ্রামের মানুষ ওসব দেয় নাফলমূল খেতে চাইলে পল্লীগ্রামে এসে খাবিখাঁটি স্বাদ পাবি তাতে আর কোনো ক্ষতিরও ভয় থাকবে নাকাঁঠাল খাওয়া শেষ করে ঝোড় থেকে পাতা ছিঁড়ে হাত মুছতে মুছতে সোজি প্রশ্ন করে- ক্ষতি হয়, কিন্তু লোকে ফলমূলে ওসব দেয় কেন মামা ? মেলা কারণ আছেবেশি লাভের আশায় দেয়কারবাইড দিলে অপুষ্ট কাঁচা ফলও পেকে যায়আর ফলমালিন দিলে ফলমূলে পচন ধরে নাঅনেকদিন পর্যন্ত রেখে দেয়া যায়কিন্তু কারবাইড, ফরমালিন বা এ ধরনের কোনো রাসায়নিক মেশানো ফলমূল খেলে মানুষের চরম ক্ষতি হয়এক কথায় ওগুলো বিষখেলে অকালে মৃত্যুও হতে পারে বুঝিয়ে বললেন মামামামার মুখে এসব শুনে সোজি ও কাব্যর খুব মন খারাপ হয়ওরা বলে- ও মামা, যারা এমন কাজ করে তাদের সাথে আমরা নেইবিষমুক্ত ফল খাওয়ার জন্য আমরা তোমার বাড়িতেই আসব বারবারওদের কথা শুনে মুচকি মুচকি হাসলেন মামা

জুলাই ২০১৭
কোর্টপাড়া, চুয়াডাঙ্গা।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন