সোজি ক্লাস সিক্সে আর কাব্য পড়ে ফোরে। পর পর দু’দিন ওদের স্কুল ছুটি। ওরা মা’র কাছে বায়না ধরল নানাবাড়ি যাবে। চুয়াডাঙ্গা জেলা
শহর থেকে নানাবাড়ি প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূর। গ্রামের নাম বাঘাডাঙ্গা। বিকেলে মায়ের
সঙ্গে বাসে চড়ে রওনা দিল ওরা। তারপরে রিকশাভ্যান। শেষে কিছুপথ
হেঁটেও যেতে হয় সেই গ্রামে। নানাবাড়ি পৌঁছুতে সন্ধ্যা ছুঁই ছুঁই। রাতে দু’ভাই-বোন ছোট মামার কাছে আবদার করল বাগানে
যাবে। মামাদের মাঠে অনেক বাগান। আম, কাঁঠাল, নারকেল আর সারি সারি সুপারি বাগান। দেখলে জান জুড়িয়ে
যায়। মামা বললেন- ঠিক আছে আমরা সকালে কাদ্দাগাড়ির মাঠের বড় কাঁঠাল
বাগানে যাব। মামার কথায় ওরা বড্ড খুশি হলো।
সকালে বাগানে রওনা হলো তারা। বাড়ি থেকে প্রায়
এক মাইলের পথ। ক্ষেতের আল বেয়ে বেয়ে হাঁটছে ওরা। কী মজা, কত সুন্দর পথ! কাব্য একা একাই বলে। বাগানে ঢুকেই
কাঁঠালপাকা গন্ধে প্রাণটা চনমন করে উঠল সোজির। খুশিতে বাগবাগ
হয়ে সে বলল- মামা গাছে মনে হয় কাঁঠাল পেকেছে। ছোট মামা ওর
পানে তাকিয়ে একটু হেসে জবাব দিলেন মনে হয়। সোজি আবার বলল- মামা কী মিষ্টি গন্ধ
জান ভরে যাচ্ছে। গাছে উঠে দ্যাখোনা মামা। মামা খুব একটা
আমল দিলেন না ওর কথায়। সামনে পানে আরও হেঁটে চললেন। পিছে পিছে সোজি
আর কাব্য। বিশাল কাঁঠাল বাগান। এ মাথা থেকে
শেষ মাথা পর্যন্ত প্রায় একশ’টা গাছ। গাছে গাছে অসংখ্য
কাঁঠাল ঝুলছে। একেক গাছে একেক রকম। কোনো গাছে ছোট। আবার কোনো কোনো
গাছের কাঁঠাল বিশালকায় বড়। ওজন করলে একেকটা প্রায় আধমণ। হঠাৎ গাছের ডালে
একটা পাখি দেখিয়ে কাব্য অবাক হয়ে বলল- মামা দ্যাখো দ্যাখো পাখিটার কত্ত বড় লেজ। এমন পাখি কাব্য
জীবনেও দেখেনি। সোজিও কপালে চোখ তুলে বলল- ওমা তাই তো! ওটা কী পাখি মামা?
নাম জানিনে, জবাব দিলেন মামা। বললেন এলাকার
মানুষ ওটাকে সাহেব পাখি বলে। কথা বলতে বলতে মামা এগিয়ে চলেন। তিনি গিয়ে থামলেন
একটা বুড়ো কাঁঠালগাছের গোড়ায়। এ গাছের কাঁঠাল দেখতে ছোট ছোট। এবার ঝোড় থেকে
একটা লাঠির মতো ডাল ভেঙে নিলেন মামা। এরপর লুঙ্গিতে কাছা মেরে বুড়ো গাছটায়
উঠে পড়লেন। একের পর এক কাঁঠালে লাঠির ঘা মারছেন তিনি। সোজি আর কাব্য
নিচ থেকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। ওরা বুঝল না একের পর এক কাঁঠালে আঘাত
করার কারণ। হঠাৎ ঘা মারা থামিয়ে মামা বললেন- এ্যায় এবার হয়েছে। কী হয়েছে মামা? সোজি আর কাব্য এক সঙ্গে প্রশ্ন করল। মামা জবাব দিলেন-
পাকা কাঁঠাল পেয়েছি। মামা বোঁটা থেকে উঁপড়ে কাঁঠালটা নিচে
নামিয়ে আনলেন। এবার ভেঙে দিয়ে বললেন- নে খা। কাঁটালের সারগুলো
সোনার মতো চকচক করছে। সোজি আর কাব্য টপাটপ তুলে তুলে মুখে
পুরতে লাগল। উহ কী স্বাদ মামা- খেতে খেতে বলল সোজি। মামা এমন মিষ্টি
কাঁঠাল আমি জম্মেও খাইনি বলল কাব্য। খেতে খেতে সোজি প্রশ্ন করল- মামা তুমি
এত গাছ থুয়ে এই বুড়ো গাছটার কাঁঠাল পাড়লে কেন? আর পাড়ার আগে লাঠি দিয়ে কাঁঠালগুলো পেটাচ্ছিলে কেন? মামা একগাল হেসে উত্তর দিলেন। বললেন এই গাছটার
কাঁঠাল সবচে’ সুস্বাদু। তোর নানা এই
গাছটার নাম দিয়েছেন রসগোল্লা ভোগ। আর কাঁঠাল পেটানোর কারণ হিসেবে বললেন, কাঁঠালে ঘা দিলে বোঝা যায় কোনটা পাকা
আর কোনটা কাঁচা। কিভাবে মামা? ফের প্রশ্ন করে কাব্য। মামা বললেন-
যে কাঁঠালটি কাঁচা সেটায় ঢপঢপ শব্দ হয়। আর পাকা কাঁঠালে ঘা দিলে থপ থপ করে। ও মা তাই নাকি
মামা! ওরা অবাক হলো। মামা ওদের কথা থামিয়ে দিয়ে বললেন কথা
বন্ধ করে বেশি করে খা। এ এক্কেবারে খাঁটি জিনিস। এতে কোনো কেমিক্যাল
নেই বুঝলি। ওই যে শুনিসনি ফরমালিন, কারবাইড এসবের বালাই নেই। গ্রামের মানুষ
ওসব দেয় না। ফলমূল খেতে চাইলে পল্লীগ্রামে এসে খাবি। খাঁটি স্বাদ
পাবি তাতে আর কোনো ক্ষতিরও ভয় থাকবে না। কাঁঠাল খাওয়া শেষ করে ঝোড় থেকে পাতা
ছিঁড়ে হাত মুছতে মুছতে সোজি প্রশ্ন করে- ক্ষতি হয়, কিন্তু লোকে ফলমূলে ওসব দেয় কেন মামা ? মেলা কারণ আছে। বেশি লাভের আশায়
দেয়। কারবাইড দিলে অপুষ্ট কাঁচা ফলও পেকে যায়। আর ফলমালিন দিলে
ফলমূলে পচন ধরে না। অনেকদিন পর্যন্ত রেখে দেয়া যায়। কিন্তু কারবাইড, ফরমালিন বা এ ধরনের কোনো রাসায়নিক মেশানো
ফলমূল খেলে মানুষের চরম ক্ষতি হয়। এক কথায় ওগুলো বিষ। খেলে অকালে মৃত্যুও
হতে পারে বুঝিয়ে বললেন মামা। মামার মুখে এসব শুনে সোজি ও কাব্যর
খুব মন খারাপ হয়। ওরা বলে- ও মামা, যারা এমন কাজ করে তাদের সাথে আমরা নেই। বিষমুক্ত ফল
খাওয়ার জন্য আমরা তোমার বাড়িতেই আসব বারবার। ওদের কথা শুনে মুচকি মুচকি হাসলেন মামা।
জুলাই ২০১৭
কোর্টপাড়া, চুয়াডাঙ্গা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন